সাভার প্রতিনিধি: বিটিভির বহুল জনপ্রিয় ম্যাগাজিন "ইত্যাদিতে" তে প্রচারিত চিকিৎসক দম্পতি ডাঃ জেসন, ডাঃ মেরেন্দী কে মহৎ প্রমান করায় ইতোমধ্যে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিষয়টি ভাইরাল হয়েছে । দেশের মানুষ চিকিৎসকদের নিয়ে বিরুপ মন্তব্য করছে ঠিক তখনি জনপ্রিয় এই ম্যাগাজিন অনুষ্ঠানে কিছু মিথ্যাচার আর তথ্য গোপনের অভিযোগ তুলেছে আশুলিয়ার মির্জানগরে অবস্থিত গণস্বাস্থ্য হাসপাতালের ডাক্তার গণ।নিজেদের গোষ্ঠিকে যখন দেশের মানুষ নানা বাক্যবানে জড়জড়িত করছে তখন তারা নিরবতা ভেঙ্গে সরব হলেন সত্য প্রকাশে, এই প্রতিবেদকে জানালেন তাদের অভিব্যাক্তি। এ ব্যপারে গণস্বাস্থ্যে হাসপাতালের ডাঃ ইসতিয়াক আহমেদ রিজভী জানান, ডাঃ এড্রিক বেকারের (ডাক্তার ভাই) প্রতিষ্ঠিত কাইলাকুড়ি স্বাস্থ্য পরিচর্যা প্রকল্পে ডাঃ জেসন, ডাঃ মেরেন্দীর সাথে আমার সরাসরি কাজের অভিজ্ঞতা আছে। অত্যন্ত মাটির মানুষ তাঁরা। আমরাও চাই তাদের মহৎ ও মহানুভবতার কাজগুলো ছড়িয়ে পড়ুক। কিন্তু এখানে আমাদের দেশের চিকিৎসকদের খোঁচা দিয়ে প্রতিবেদন করারতো কোনো মানে নেই!
কাউকে মহৎভাবে প্রকাশ করতে পারেন, কিন্তু কাউকে ছোট করে, মিথ্যাচার করে কেন?
তিনি আরো জানান, সম্প্রতি গত ২৯শে নভেম্বর শুক্রবার রাতে বিটিবি তে বহুল জনপ্রিয় ম্যাগাজিন অনুষ্ঠান ইত্যাদিতে প্রচারিত অনুষ্ঠানের এই প্রতিবেদনটির মাঝে বলা হয় "দেশের কেউ সাড়া না দিলেও" কথাটি শতভাগ ভুল!
২০১৩ সালে ডাঃ এড্রিক বেকার (ডাক্তার ভাই) গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রে পরিদর্শনে আসেন। এরপরই গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ডাঃ জাফরুল্লাহ চৌধুরী এড্রিক বেকারের কাইলাকুড়ী প্রকল্প পরিদর্শন করলে, কাইলাকুড়ীর প্রকল্প থেকে চিকিৎসক চাওয়ার দাবি জানানো হয়। ঠিক এরপর থেকেই থেকে গণস্বাস্থ্য সমাজ ভিত্তিক মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের চিকিৎসকরা সেখানে নিয়মিতভাবে চিকিৎসা সেবা প্রদান করে আসছেন। ডাঃ এড্রিক বেকারের মৃত্যুর পরেও তা এখন পর্যন্ত চালু আছে। উল্লেখ্য, গণস্বাস্থ্য কেন্দ্র তাদের নিজস্ব গ্রামীণ সাব-সেন্টারের সাথে কাইলাকুড়ী প্রতিষ্ঠানটিরও দেখভাল করে আসছে। গণস্বাস্থ্য সমাজ ভিত্তিক মেডিকেল কলেজের, সমাজ ভিত্তিক (Community Based) মেডিকেল চিকিৎসার অংশ হিসেবে অত্র প্রতিষ্ঠানের চিকিৎসকদের মধ্য থেকে পালাক্রমে ২-৪মাস করে চক্রাকারে চিকিৎসকেরা সেখানে অবস্থান করেন ও চিকিৎসা সেবা প্রদান, ওখানকার স্বাস্থ্য কর্মীদের স্বাস্থ্য প্রশিক্ষণ প্রদান করা সহ বিভিন্ন সেবামূলক কাজে অংশগ্রহণ করছেন। গণস্বাস্থ্য সমাজ ভিত্তিক মেডিকেল কলেজের এই পর্যন্ত প্রায় ৩০এর অধিক চিকিৎসক কাইলাকুড়ী স্বাস্থ্য পরিচর্যা প্রকল্পে আবাসিকভাবে অবস্থান করে চিকিৎসা সেবা প্রদান করেছেন। ডাঃ রাকিব, ডাঃ তারিফ, ডাঃ মেহেদী, ডাঃ নাজমুল, ডাঃ তাকি, ডাঃ ইসতিয়াক ডাঃ সুইটি, ডাঃ মুন প্রমুখ। এবং বর্তমানে দু"জন নারী চিকিৎসক ডাঃ সুমি ও ডাঃ জুই সেখানে কর্মরত আছেন। শুধু বাধ্যতামূলকভাবে অবস্থান করার জন্যই নয় বরং এর বাহিরেও কাইলাকুড়ীর রোগী, কর্মী, স্টাফদের সাথেও তাদের আন্তরিকতা গড়ে উঠে। তারা সবসময়ই চেষ্টা করেন, ডাক্তার ভাইয়ের গড়ে তোলা গরিবের জন্য প্রতিষ্ঠিত এই স্বাস্থ্য প্রকল্পের জন্য কিছু করার। এরই অংশ হিসেবে তারা ফেসবুক ভিত্তিক একটি গ্রুপ "ডক্টরস কমিউনিটি" এর মাধ্যমে সাহায্য সহযোগীতা প্রদান করে আসছে যার উদ্যোক্তা ছিলেন কাইলাকুড়ীর জন্য নিবেদিত চিকিৎসক ডাঃ রাকিব। তিনি কাইলাকুড়ীর জন্য প্রায় ১লক্ষ টাকার চিকিৎসা সম্পূরক সামগ্রী প্রদান করেন। এবং একই সাথে উক্ত গ্রুপের প্রতিষ্ঠাকালীন সদস্য হিসেবে ছিলেন ডাঃ ইরানী, ডাঃ তানভীর, ডাঃ তাকি, ডাঃ ইসতিয়াক প্রমুখ। কিছুদিন আগেও উক্ত ডক্টরস কমিউনিটি এই গ্রুপের পক্ষ থেকে কাইলাকুড়ীতে দুটি অক্সিজেন সিলিন্ডার মেশিন দেয়া হয়, ঔষুধ চিকিৎসা সামগ্রী প্রদান করা হয়।এছাড়াও এই গ্রুপের মাধ্যমে কাইলাকুড়ীতে কাজ না করলেও অনেক চিকিৎসক সাহায্যর হাত বাড়িয়ে যুক্ত থাকেন। ডাঃ তানভীর, ডাঃ ইরানী চিকিৎসক দম্পতি কাইলাকুড়ীতে নেবুলাইজার মেশিন দান করেন। এবং তাদের মাধ্যমে কাইলাকুড়ীতে প্রথমবারের মতো রোগীদের নেবুলাইজেশন কাজ শুরু হয়। ডাঃ তাকি, ডাঃ ইসতিয়াক কাইলাকুড়ীতে আম্বু ব্যাগের প্রচলন শুরু করেন এর আগে নবজাতক শিশুদের সেখানে মাউথ টু মাউথ শ্বাসপ্রশ্বাস দেয়া হতো যার মাধ্যমে ইনফেকশন ছড়ানোর রিস্ক থাকতো। এছাড়াও বাহিরের প্রতিষ্ঠানের বহু চিকিৎসকও কাইলাকুড়ীর জন্য কাজ করেছেন। ইত্যাদিতে দেশের কোন চিকিৎসক দায়িত্ব নেয়নি বলা হলেও প্রতিবেদনে উল্লেখ্য অজস্র চিকিৎসক কাইলাকুড়ীর জন্য দায়িত্ব নিয়েই কাজগুলো করেছেন এবং গণস্বাস্থ্য কেন্দ্র তাদের মাথায় বটবৃক্ষের ছায়া হয়ে ছিলো এখনো আছে।
তাদের অপারেশনের জটিল রোগীদের এখনো এই হাসপাতালে এনে নামমাত্র মূল্যে গুরুত্বপূর্ণ সেবা প্রদান করা হয়।
এছাড়াও ময়মনসিংহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল, ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল, বারডেম জেনারেল হাসপাতালে কাইলাকুড়ী থেকে রেফারেল রোগীরা চিকিৎসা সেবা নিয়ে থাকেন। বিএনএসবি চক্ষু হাসপাতালে কাইলাকুড়ীর রোগীদের বিনাখরচে চোখের পরীক্ষা, ছানি অপারেশন, চশমা, ঔষুধ, দেয়া হয়। প্লাস্টিক সার্জন ডাঃ শরীফ হাসান স্যার কাইলাকুড়ীর আগুনে পোড়া রোগীর বিনামূল্য অপারেশন করেন। স্মাইল ট্রেইনের মাধ্যমে বিনা খরচে জন্মগত ঠোট কাটা, তালুকাটার অপারেশন করা হয়।
যদিও আমরা ফোকাসের আশায় কিছু করিনা, যা করি মনের খোরাকে, ভালবাসা থেকে।
এত কিছুর পরেও কেন দেশের চিকিৎসকদের নিয়ে এত ভৎসনা ?
No comments:
Post a Comment